আবারও ভুল চিকিৎসা করল চিকিৎসক ফারুক হাসান! কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ

 

ফরমান শেখ,
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে আবারও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আগের ভুল চিকিৎসার ঘটনায় চক্ষু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি সিরাজগঞ্জের প্রফেসর মতিন আই কেয়ার সিস্টেম (বি.এন.এস.বি) কর্তৃপক্ষকে বদলির জন্য লিখিতভাবে জানানো হলেও তাকে বদলি করা হয়নি।

ফলে ওই চিকিৎসক বহাল তবিয়তেই ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে রোগীরা। ভুল চিকিৎসা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার কষ্টাপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম নামের এক রোগী।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম নামের এক রোগী গত ৪ মে তার ডান চোখের সমস্যাজনিত কারণে ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে যান। এসময় হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ থেকে ৮০ টাকার একটি টিকেট ক্রয় করে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো ফারুক হাসানের চেম্বারে যান। পরে চিকিৎসক হাসান তার চোখ দেখে তাৎক্ষণিক অপারেশন করতে বলেন। এসময় রোগীকে জানানো হয় তাৎক্ষণিক অপারেশন না করলে তার চোখে বড় ধরনের সমস্যা হবে।

পরে রোগী শফিকুল ভয়ে ওইদিন অপারেশনের জন্য দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হয়ে চোখের অপারেশন করান। এসময় তার ডান চোখে অপারেশন করেন চিকিৎসক ফারুক হাসান। পরবর্তীতে শফিকুল চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ করে সেবন করলেও চোখের সমস্যা দূর না হওয়ায় আবারও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পর ওই রোগী হাসপাতালে গিয়ে ওই চিকিৎসককে না পেয়ে হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক আইয়ুব আলীকে চোখ দেখান।

পরে চিকিৎসক আইয়ুব আলী ওই রোগীর চোখ দেখে ব্যবস্থাপত্রে লেখেন তার চোখে আলসার হয়েছে। পরে ওই রোগী শফিকুল তার চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৭ মে ঢাকার মক্কা চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক দেখান। পরে মক্কা হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মজিবুর রহমান তার চোখ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন তার চোখে ময়লা আটকে আছে।

এর আগে ২ মার্চ ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসক দেখান গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা গ্রামের সুফিয়া বেগম (৬৫)। পরীক্ষার মাধ্যমে তার ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করা হয়। এজন্য চিকিৎসক ডান চোখ অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। এরপর ৬ মার্চ তার ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. ফারুক হাসান।

রোগী আপত্তি জানালেও ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন তিনি। পরে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ১৬ মার্চ ডান চোখের অপারেশন করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, চিকিৎসক ফারুক হাসান এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করলেও চোখের বিষয়ে তার কোনো ডিগ্রি না থাকলেও হাসপাতালে নিয়মিত চোখের অপারেশন করে যাচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়তই ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে রোগীরা।

ভুক্তভোগী রোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তার ফারুক হাসানের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছি। রোগ নির্ণয় না করেই তিনি আমার ভালো চোখ অপারেশন করেছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো আমার চোখে। এছাড়া ওই চিকিৎসকের লেখা ওষুধ খেয়ে শরীর সব সময় ঝিমুনি থাকতো। ঠিকভাবে কাজ করতে পারতাম না। চোখ দেখানোর সময় বার বার ওই ডাক্তারকে বলেছি ভালো করে চোখ দেখেন। কিন্তু তিনি না বুঝেই ভয় দেখিয়ে আমার চোখ অপারেশন করেছেন। টাকাও অপচয় হলো আবার প্রতারণার শিকার হলাম। পরবর্তীতে জানতে পারলাম ওই চিকিৎসক আগেই এমন ভুল চিকিৎসা করেছেন।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের অফিস প্রধান ও কোষাধ্যক্ষ হাতেম আলী খান বলেন, এর আগেও ডাক্তার ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ছিল। তবে সেটা মীমাংসা হয়েছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই ডাক্তারকে এখান থেকে বদলির জন্য লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় হাসপাতাল সিরাজগঞ্জের প্রফেসর মতিন আই কেয়ার সিস্টেম কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিকল্প ডাক্তার না পেয়ে তাকেই এখানে চিকিৎসার জন্য রেখে দিয়েছে। ফলে তিনি এখানে চিকিৎসা কার্যক্রম করছে এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, নতুন করে ভুল চিকিৎসার জন্য কেউ এখনও অভিযোগ দেয়নি। আগে তার বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ছিল। এরজন্য তাকে হাসপাতাল থেকে বদলির জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে কেন তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বা বদলি করেনি সেটা জানা নেই।

ভুঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফারুক হাসানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এসময় তিনি জানান, আপনার যা জিজ্ঞাসা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বলতে পারেন।

সিরাজগঞ্জের প্রফেসর মতিন আই কেয়ার সিস্টেমের (বি.এন.এস.বি) প্রধান হিসাবরক্ষক আনছার আলী বলেন, ডাক্তার ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা করোনার অভিযোগে তাকে মৌখিকভাবে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। যাতে পরবর্তীতে এ ভুল আর না হয়। এছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে সেখানে নতুন কোনো চিকিৎসক দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

 

চিকিৎসক ফারুক হাসানের চোখের ওপর কোনো ডিগ্রি আছে কিীনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তেমন কোনো ডিগ্রি না থাকলেও ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে তাকে পোস্টিং দেয়ার আগে সিরাজগঞ্জের প্রফেসর মতিন আই কেয়ার সিস্টেমে তাকে তিন বছর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে চোখের ওপর। এরপর তাকে সেখানে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। তবে নতুন করে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি জানা নেই।

 

এ বিষয়ে রোববার (২৩ মে) বিকেলে উপজেলা কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগেও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এক চোখের পরিবর্তে আরেক চোখ অপারেশন করার অভিযোগ ছিল। অভিযোগটি তদন্ত করে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.