চট্টগ্রাম বিআরটিএ: ২১ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের মিশন সমাপ্ত

এস এম পিন্টু

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস প্রদান, রুট পারমিট প্রদান ও মেয়াদোত্তীর্ন সিএনজি স্ক্র্যাপকরনসহ বিভিন্ন কাজে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বিআরটিএ চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তারা। সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্রের সমন্বয়ে ডিলার ও শোরুম মালিকদের মাধ্যমে এসব চাঁদার টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ন ৩৬ শ সিএনজি স্ক্র্যাপকরণের মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এসব গাড়ির রিপ্লেস নাম্বার ও রুট পারমিটের নামে আরো ১০ কোটি টাকা আদায়ের মিশন এখনো চলমান আছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির ফলে বিআরটিএ’র অফিসাররা সরাসরি এই চাঁদার টাকা আদায় না করে আন্তঃজেলা সিএনজি চোর চক্রের কতিপয় সদস্য, বিআরটিএ’র দালাল, কথিত শ্রমিক নেতা ও গাড়ির ডিলার এবং শোরুম মালিকদের মাধ্যমে এই চাঁদার টাকা আদায় করা হয়েছে এবং আদায় করা হচ্ছে বলে একাধিক সিএনজি মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। সিএনজি মালিকদের ভাষ্যমতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গাড়ি স্ক্র্যাপকরণের জন্য নাম্বার ও দিনক্ষণ প্রকাশ করলেও গাড়ি নিয়ে ভাঙ্গতে গেলে নানা অজুহাতে গাড়ি না ভেঙ্গে ফেরত দিয়েছেন, পরে দালাল বা তাদের সিন্ডিকেট সদস্যের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হলে কোন রকম ভোগান্তি ছাড়াই স্ক্র্যাপকরণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছেন বলে জানা গেছে। এসমস্ত টাকার পরিমান নিয়ে সিএনজি মালিকের সাথে বাক-বিতন্ডাও হয়েছে বিআরটিএ কার্যালয় মাঠে। আর এসব অনিয়ম ও ভোগান্তি রোধকল্পে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে অভিযোগও করেছেন সিএনজি মালিক যা এখনো তদন্তনাধীন আছে বলে দুদক সুত্রে জানা গেছে।

একাধিক সিএনজি মালিকের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেছেন আয়ুস্কাল শেষ হওয়া সিএনজি স্ক্র্যাপকরণে কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও দালালের মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি ভাঙ্গার জন্য ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাবী করা হয় আবার টাকা দিলে ইঞ্জিন ও চেসিস নাম্বার মিল না থাকলেও খুব সহজেই ভাঙ্গা যায় তবে সেক্ষেত্রে গুনতে হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। সেই ৩য় ধাপে ৩৬ সিএনজি স্ক্র্যাপকরণে গড়ে ৬০ হাজার টাকা ধরা হলেও শুধু এই খাত থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২১ কোটি টাকা।
এখানেই শেষ নয় ভাঙ্গা এসব গাড়ির নতুন নাম্বারের জন্য আবার গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ আর রুট পারমিটের জন্য নেওয়া হচ্ছে আরো ৩ হাজার টাকা যা চলে যাবে উপ-পরিচালকের পকেটে। এই হিসেবে আরো প্রায় ১০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি বাণিজ্য চলমান আছে। এই টাকা মালিকদের কাছ থেকে ডিলার ও শোরুম মালিকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও ভুক্তভোগী ক্রেতারা জানান। বিআরটিএ এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিজেদের পক্ষে শত সাফাই গাইলেও তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলেও বুঝা যায় যে তারা চাঁদার টাকার জন্য কতটা বেপরোয়া।
বিআরটিএ সুত্রে জানা গেছে ৩য় দফায় ১ম দিনে গত ১৬ নভেম্বর চট্টমেট্রো থ-১১-৮৭৪৮ থেকে চট্টমেট্রো থ-১২-০৩০০ পর্যন্ত ৫৫১ টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করার কথা থাকলেও ৬০ থেকে ৬৫ টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করেন, চাঁদার টাকা পরিশোধ না হওয়ায় নানা অজুতে ও বাকী গাড়িগুলো ফেরত দিয়েছেন। একইভাবে ২য় দিন ১৭ নভেম্বর চট্টমেট্রো থ-১২-০৩৩৮ থেকে চট্টমেট্রো থ-১২-০৪৬৮ পর্যন্ত ১৩১ টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করার কথা থাকলেও ভেঙ্গেছেন মাত্র ৭০ থেকে ৭২টি, ৩য় দিন ১৮ নভেম্বর চট্টমেট্রো থ-১২-০৪৬৯ থেকে চট্টমেট্রো থ-১২-০৬০৬ পর্যন্ত ১৩৮ টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করার কথা থাকলেও মাত্র ৫৪ টি গাড়ি ভাঙ্গা হয়েছে ৪র্থ দিন ১৯ নভেম্বর চট্টমেট্রো থ-১২-০৬০৭ থেকে চট্টমেট্রো থ-১২-০৭৩৬ পর্যন্ত ১৩০ টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করার কথা থাকলেও চুক্তিভিত্তিক চাঁদার টাকা পরিশোধ না হওয়ায় সবগুলো গাড়ি না ভেঙ্গে অনেক গাড়ি ফেরত দিয়েছেন। একইভাবে চলতি বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি সিএনজি গাড়ি স্ক্র্যাপকরণের সময় বিআরটিএ অফিসের মুল ফটকে তালা লাগিয়ে উত্তরা মোটরস এর ১১ জন ডিলার ও চিহ্নিত কয়েকজন দালাল ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে না দিয়ে ইচ্ছেমতো দাম হাকিয়ে টাকা আদায় করে স্ক্র্যাপকরণ শেষ করেছেন।
এব্যপারে জানতে বিআরটিএ চট্টগ্রামের সিএনজি অটোরিক্সা স্ক্র্যাপকরণ কার্যক্রমের আহবায়ক ও বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ইঞ্জি) মো. শহিদুল্লাহর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হইনি। সর্বশেষ এই রিপোর্ট পাঠানোর সময় রোববার আবারো কল দিয়ে সংযোগ পাওয়া যায়নি এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

এব্যপারে বিআরটিএ এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মুঠোফোনে কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.