মানুষের মত দেখলে তবে মানুষ নয়

 

জীব বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে যাদের প্রাণ আছে তথা বৃদ্ধি কিংবা ধংস যাদের আছে তারা প্রাণী। এক্ষেত্রে অনুমান করা যায়, কেবল মনুষ্য সৃষ্ট বিহীন বাকী সবকিছু প্রাণীকুলের আওতাধীন। সাপ, ব্যাঙ, গরু, ছাগল, গাছ, মাছ এবং মানুষ সহ ইসলাম ধর্মের তথ্যমতে ১৮ হাজার প্রাণী রয়েছে। যাদের মধ্যে ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে হিংস্র সহ সকল প্রকার প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। আমার জানামতে, এ পর্যন্ত যেসকল প্রাণীর অস্তিত্ব পৃথিবীতে রয়েছে সব প্রাণীর উর্ধ্বে মানুষকে রাখা হয়েছে। তার একমাত্র কারন মানুষের কাছে বুদ্ধিমত্তা আছে। মানুষ বুঝে কোন সময় কি করণীয়। বিশেষ করে মানুষ শ্রেষ্ট হবার একমাত্র কারন মানুষের মধ্যে হিংস্রতার কোন জায়গা নেই।

প্রশ্ন হল হিংস্রতা কি? হিংস্রতা হল মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব তা ভুলে যাওয়া। আপনি যখন ভুলে যাবেন সমগ্র পৃথীবিতে আপনি সৃষ্টির সেরা কেউ তখন আপনি হয়ে যাবেন হিংস্র কেউ। তখন আপনি যেসব করবেন তাহল, মানুষ কিংবা জগতের অন্যান্য প্রাণীদের উপর অত্যাচার, মানুষ কিংবা প্রণীদের খুন সহ সকল প্রকার অনৈতিক কাজ। যদিও এ নৈতিকতা কিংবা বুদ্ধিমত্তার জন্যই কিন্তু আপনি সৃষ্টির সেরা জীব। তবে হিংস্র হলে আপনার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে সেসব।

হিংস্র হলে মানুষ কি করে? প্রথমে একটা উদাহারন দিই। সৃষ্টির সকল জীবের মধ্যে বাঘ, সিংহ, নেকড়ে, শিয়াল, কুমির এরাও কিন্তু প্রাণী। যাদের প্রাণ আছে, বৃদ্ধি আছে, প্রজনন হয় আবার মৃত্যুও হয়। কিন্তু তারপরেও এদেরকে বলা হয় হিংস্র। কারন পৃথীবিতে যতদিন এরা বেঁচে থাকে ততদিন এরা কেবল ক্ষতি সাধনই করে যায়। বেঁচে থাকাকালীন তাদের মাধ্যমে কারো লাভ হয়না। তারা এমন হিংস্র যে, প্রাণীর মৃত্যুই তাদের কাছে সুখ। কারন তারা মৃত্যু হলেই খেতে পায়।

মানুষের মধ্যেও তেমন কিছু হিংস্রতা আছে। প্রাচীনকালে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীদেরকে মারত। জীবিকা নির্বাহের জন্য মাংস ভক্ষণ পরবর্তী বেঁচে থাকত। মানুষ একালেও অনুমতি সাপেক্ষ প্রাণী হত্যা করে বেঁচে থাকে। কিন্তু ক্ষতি সাধনের জন্য যদি হয় সেই হত্যাকান্ড তাহলে সেটি হয় হিংস্রতা । একালে মানুষের হিংস্রতা যেন প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে। মানুষ শুধু ক্ষতি সাধনের জন্য প্রাণীকেই হত্যা করছেনা একজন মানুষ অপর একজন মানুষকেও নিমিষেই হত্যা করে যাচ্ছে। বাঘ, সিংহ, নেকড়ে কিন্তু চাইলেই কখনো মানুষ হতে পারেনা। কিন্তু মানুষ যখন সেই বাঘ,সিংহ কিংবা নেকড়ে হয়ে যায় সে কি তাহলে আর মানুষ থাকে? সেসময় তাকে মানুষ বলা হলে অন্তত মনুষ্যজাতিটাকেই অপমানিত করা হবে। তারা তখন হয়ে যায় পশু তথা হিংস্র প্রাণী। বর্তমানে ক্ষমতা কিংবা টাকা পয়সার লোভে মানুষ মানুষের ক্ষতি সাধন করতে অন্তত কয়েক মিনিটও চিন্তা করছেনা। শুধু কেবল ক্ষতি নয়, করছেন একে অপরকে হত্যা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসে খুন,হত্যা-গুমের খবর সহ বিভিন্ন হিংস্রতার খবর। যে সকল কর্মকান্ড মানুষ হিসেবে মানুষের সাথে কখনো যায়না।

একটা ঘটনা বলিঃ চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলায় একজন ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারী দিনগত রাতে তাকে হত্যা করা হয়। সে কেবল একজন বৃদ্ধ নয় অন্তত সর্বোচ্ছ প্রবীণদের একজন। তাকে ঘুমন্তকালে হত্যা করে জমির উদ্দীন নামে তার এক গৃহকর্মী। কিন্তু বিষয়টি হল, এই গৃহকর্মী শুধু কয়েকদিন কিংবা কয়েক মাস আগে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়নি। সে তার জীবনের অন্তত সিংহভাগ সময় ঐ বৃদ্ধের সাথেই কটিয়েছে। ছোটকাল থেকে পেলে পুষে নিজ সন্তানের মত করে বড় করা গৃহকর্মীটাও কিন্তু আজকে এসে তার কর্তাকে খুন করে ফেলল। জেনে আরো অবাক হবেন যে, এই হত্যাকান্ডটি কেবল সামান্য বেতন ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঘটে। এমতাবস্থায় আপনি কি তাকে মানুষ হিসেবে সম্বোধন করবেন? সুস্থ মস্তিস্কের কেউ হয়তো তাকে মানুষ হিসেবে সম্বোধন করবেনা। তাহলে সে হয়ে গেল তখন হিংস্র কোন প্রাণী, মানুষ নয়।

মানুষকে মানুষ হতে হবেঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কারন মানুষের মধ্যে হিংস্রতা নেয়। তবে যখন দেখি মানুষ মানুষকে খুন করছে স্বার্থ কিংবা ক্ষমতার লোভে, তাহলে সে নিংস্বন্দেহে মানুষ নয়, হিংস্র কোন পশুর সমতুল্য তাৎক্ষণিক। পশু কিংবা হিংস্র কোন প্রাণী যেমন মানুষ হতে পারেনা তেমনি মানুষের মধ্যে সেই পশু কিংবা হিংস্র প্রাণীদের বৈশিষ্ট বিরাজ করতে পারেনা। মানুষ হতে হলে মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব সেটা মাথায় থাকতে হবে। বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করতে হবে। মনুষ্যত্ব কিংবা মানবিকতা বজায় রাখতে হবে। হিংস্রতা পরিহার করতে হবে। এসব যদি আপনি করতে না পারেন তাহলে, আপনি দেখতে মানুষের মত হবেন তবে মানুষ নয়।

লেখক

মোঃ তারেকুল ইসলাম

সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.