চট্টগ্রাম নগরে শ্বশুর বাড়িতে তানভির (২৫) নামে এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়; তবে এ ঘটনায় পুলিশ অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। কিন্তু নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আনভীরকে হত্যা করা হয়েছে। পরে পুলিশও হত্যার প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়ে হত্যা মামলা রেকর্ড করে। এভাবে দুইদিনের ব্যবধানে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়ে গেল ‘হত্যাকাণ্ড’।
এর আগে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাতে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানাধীন মোমিন রোডের ঝাওতলা এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত তানভীর সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউপির ৪নং ওয়ার্ড চিব্বাড়ী খন্দকার পাড়া এলাকার বদরুদ্দোজার ছেলে।
এই ঘটনায় নিহত তানভীরের পিতা বদরুদ্দোজা বাদী হয়ে তানভীরের স্ত্রী সায়িদা আক্তার সানজুসহ ৪ জনকে আসামি করে নগরীর কোতোয়ালী থানায় ২৪ মার্চ (শুক্রবার) একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বদরুদ্দোজা উল্লেখ করেন, ২২ মার্চ সকালে আমার বড় ছেলে হিরু আমাকে ফোন করে জানায় আমার অপর ছেলে তানভীর মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেলে ছেলের লাশ দেখতে পাই। পরবর্তীতে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে ছেলের বউ সানজু বলেন, ২১ মার্চ ভোররাতে তার শ্বাসকষ্ট হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী ভোর সাড়ে ৬ টার সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে সেদিন কোতোয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করি। পরবর্তীতে ছেলের মৃতদেহ দেখে অস্বাভাবিক মনে হলে ছেলের স্ত্রী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছে পুনরায় মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। তখন তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন। পরবর্তীতে জানতে পারি, শ্বশুরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেয়াকে কেন্দ্র করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন নির্মম নির্যাতন করে সেদিন রাতে আমার ছেলেকে হত্যা করে।
এসএম রিয়াজ নামে তানভীরের এক বন্ধু জানান, তানভীর বিয়ে করেছিল সম্পর্কের মাধ্যমে এবং চট্টগ্রাম শহরস্থ শ্বশুর বাড়ির ভাড়া বাসায় থাকতো। এ নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে একটু মনোমালিন্য ছিল। সেদিন (মঙ্গলবার) ছিল তানভিরের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী। তানভীর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত ১১ টায় বাসায় (শ্বশুর বাড়ি) ফিরেছে। কিন্তু পরের দিন শুনি সে স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু এই কথাটি আমরা বিশ্বাস করতে না পেরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে খোঁজ নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার মৃত্যুটি অস্বাভাবিক বলে দাবি করেন এবং লাশটি ময়নাতদন্ত করেন। এছাড়াও ডাক্তারের ভাষ্যমতে তার অন্ডকোষ ও শরীরের বিভিন্ন সংবেদনশীল জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যায় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীরের পিতা বদরুদ্দোজা বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও আমি চোখে দেখিনি। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা প্রমাণ করে এটি হত্যাকাণ্ড। তাছাড়া তারা বলেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডাক্তার লিখেছেন তানভীরকে মৃত আবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
তবে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তানভীরের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক আরমান হোসেন বলেন, এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রীসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।
সূত্র: একুশে পত্রিকা