জাহাঙ্গীর আলম শামস,
কক্সবাজার থেকে –
কক্সবাজার উপকূলে এখন চলছে শুঁটকি তৈরির ধুম। বছরের এ সময় আবহাওয়া শুঁটকি তৈরি জন্য সবচেয়ে উপযোগী হওয়ায় কর্মব্যস্ত উপকূলের শুঁটকি পল্লীগুলো।
,
সামুদ্রিক শুঁটকিমাছ এক প্রকার মুখরোচক খাবার। রুচিবর্ধক খাবারের তালিকার শীর্ষে শুঁটকি মাছ। শুঁটকিমাছ অনেকে না খেলেও শীতে শুঁটকিমাছের স্বাদ নিতে ভুলেন না ভোজনবিলাসিরা।
দেশের বৃহত্তম শুটকি উৎপাদন কেন্দ্র হচ্ছে কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুটকি মহাল।
এই মহালেই দেশের সর্বোচ্চ শুটকি উৎপাদন হয়। এছাড়াও এই জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও রয়েছে বড় বড় শুটকি মহাল। এখানকার উৎপাদিত শুটকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে^র বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। বরাবরের মতো এবারও নাজিরারটেকসহ অন্যান্য শুটকি মহালে শুটকি উৎপাদন চলছে।
বর্তমানে সমুদ্র উপকূলে চলছে শুঁটকি উৎপাদনের উৎসব চলছে, আগামি জুলাই মাস পর্যন্ত চলবে উৎসব। মৌসুমে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও প্রায় চার’শ কোটি টাকার শুঁটকি রফতানির আশা করছেন উপকূলের শুটকি ব্যবসায়ীরা।
শহরের নাজিরারটেকের সমুদ্র তীরবর্তী বালুচরের প্রায় ১০০ একর জমিতে গড়ে ওঠেছে দেশের বৃহত্তম শুটকি পল্লী। এখানে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী।
প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নাজিরারটেকসহ জেলার উপকূলীয় জেলেপল্লীসমূহে শুটকি উৎপাদন চলে।
তবে বৃষ্টি না থাকলে বছরের অন্যান্য সময়েও কিছু শুটকি উৎপাদন হয়। সাগরের বালিয়াড়িতে বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার উপর কাঁচা মাছ সূর্যের তাপে ৩/৪ দিন শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুটকি।
এরপর উৎপাদিত শুটকিগুলো পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। শহরের নাজিরারটেক ছাড়াও মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়াসহ জেলার উপকূলীয় সৈকতে শুটকি উৎপাদন হয়।
দেশের বৃহত্তম কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০টির বেশি মহালে বাঁশের মাচায় রোদে বিপুল পরিমাণ মাছ শুঁটকি করা হচ্ছে।
এর মধ্যে রুপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির শুঁটকি রয়েছে। এ শুটকি মহালে কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। গভীর সাগর থেকে জেলেরা মাছ ধরে এনে এখানে বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক ছাড়াও নুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, সোনাদিয়াসহ জেলার মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরো ৩ শতাধিক মহালেও শুঁটকি উৎপাদন চলছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মৌসুমে নাজিরারটেক শুটকি মহালে মাছের গুঁড়াসহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় চার’শ কোটি টাকার বেশি। উৎপাদিত এসব শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
জেলার অন্যান্য এলাকাতেও নাজিরারটেকের প্রায় সমপরিমাণ শুটকি উৎপাদিত হয়।
নাজিরারটেক শুটকি মহালের ব্যবসায়ী আজিজ উদ্দিন জানান, এখানে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি করা হয়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতিকেজি লইট্যা ৯০০-১৪০০টাকা, ছুরি ৮০০-১৮০০ টাকা, চিংড়ি ১০০০-১৫০০টাকা, পোপা ৫০০-৮০০টাকা, মাইট্যা ৮০০-১৬০০টাকা, কোরাল ১৫০০-১৯০০টাকা, রুপচাঁদা ১৮০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আ.ক.ম নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘প্রায় এক’শ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এ শুঁটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ত।
দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল এই নাজিরারটেক। এখানে ব্যবসায়ীও আছেন প্রায় দুইহাজার। এ মহাল থেকে প্রতিদিন প্রায় দু’শ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুঁটকি। যার বাজার মূল্য প্রায় দু’শ কোটি টাকা।
মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, ‘শহরের নাজিরারটেকের উৎপাদিত শুঁটকি হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় শুরু পোপা শুঁটকি রফতানি করে গত বছর ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় করে। এ বছর উৎপাদন ভালো হলে শুঁটকি রফতানিতে প্রায় চার’শ কোটি টাকা আয় করতে পারে।