মহেশখালীতে দুশ্চিন্তায় লবণ চাষিরা ২০ কেজি লবণে জুটেনা ১ কেজি চাউল

মিছবাহ উদ্দীন আরজু, মহেশখালী প্রতিনিধিঃ

মহেশখালীতে উৎপাদিত লবণ অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক মান সম্পন্ন হওয়ায় এখানকার লবণ এক সময় মণ প্রতি (৪৪ কেজিতে এক মণ) ৬০০ টাকায় উচ্চ দামে বিক্রি হত। কিন্তু বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দাম নেই, মণ প্রতি বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। কিন্তু এর মধ্যে লবণ চাষি পাই ১১০ টাকা। পূর্বে এত অল্প দামে লবণ কোনদিন বিক্রি হয় নাই। যার কারণে লাভ তো নই বরং উৎপাদন খরচ ওঠছে না, লোকসান গুনছেন প্রান্তিক চাষিরা ।

গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীতে ঘুরে দেখা যায়, লবণের মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। কয়েক’শ একর জমিতে চাষিরা লবণ উৎপাদন করছেন। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় সেই লবণ মাঠে স্তূপ করে রেখেছেন তাঁরা। লবণের নায্য মূল্যে না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন গুনছেন লবণ চাষিরা। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশীয় লবণের দাম নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির করছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার লবণ প্রকল্প কার্যালয় জানায় , চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একক জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এই মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ লক্ষ ১৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহেশখালীতে ৩ কানি (১২০ শতক) জমিতে লবণ চাষ করতে বর্গা দিতে হয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা। ১২০ শতক জমিতে ১ জন শ্রমিকের ৬ মাসে খরচ দিতে হয় ১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে পলিথিন প্রয়োজন হয় পনেরো হাজার এবং পানি খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩ কানিতে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ১২০ শতক জমিতে লবণ উৎপাদিত হয় সর্বোচ্চ ৭৫০ মণ। যার বিক্রয়মূল্যে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা (এক মণ ১৪০ টাকা)। ফলে প্রতি ৪০ শতকে (১ কানি=৪০ শতক) লোকসান গুণতে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। এভাবে দাম পড়ে যাওয়ায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে লবণচাষীরা। অনেকে ঋণের টাকা পরিশোধের ভয়ে বাধ্য হচ্ছেন পালিয়ে যেতে।

মাতারবাড়ীর লবণচাষী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, এই মৌসুমে ৪০ কানি জমিতে লবণ চাষ করে দিশেহারা হয়ে পড়ছি। জমির লাগিয়ত, শ্রমিকদের বেতনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারতেছি না। লোকসান লেগে আছে। লবণ গুলো বিক্রি না করে জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। সামনে কালবৈশাখী ঝড় আসবে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

লবণচাষি অহিদুল বলেন, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এক মণ লবণের দাম ১৪০ টাকা। যা উৎপাদন খরচের চেয়ে তুলনামূলক কম। লবণ বিক্রি করলে প্রতি কেজি পাই ৩ টাকা। লকডাউনে একটা চাউলের বস্তা ও ৩ হাজার টাকা। মৌসুমের শেষ দিকে ও দাম না বাড়লে পথে বসা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।

লবণ চাষি সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সমস্যা সমাধানে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। মানববন্ধন করলে ও কোন কাজ হচ্ছে না। আমাদের দাবি লবণ আমদানি বন্ধসহ লবণ বোর্ড গঠন এবং লবণের মূল্য মণ প্রতি অন্তত ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। লবণ চাষির সাথে জড়িত পঞ্চাশ হাজার মানুষকে বাঁচাতে লবণের নায্য মূল্য চূড়ান্ত করার বিকল্প নাই বলে মনে করেন তিনি।

কক্সবাজার বিসিকের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, প্রান্তিক লবণ চাষিদের কাছ থেকে লবণ ক্রয় করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে লবণ আমদানি করার সুযোগ নাই। তবে কৌশলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম সালফেট, গ্লোভার সল্ট আমদানি করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৩ লক্ষ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে লবণচাষিরা কোন প্রণোদনা পান নাই বলে জানান।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.